
বুধবার ● ২০ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » রাঙামাটিতে বাজারফান্ড জমির বন্ধকি ও রেজিস্ট্রি চালুর দাবিতে মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বাজারফান্ড জমির বন্ধকি ও রেজিস্ট্রি চালুর দাবিতে মানববন্ধন
মো. কামরুল ইসলাম রানা :: পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত বাজারফান্ড ভুক্ত জমির বন্ধকি ও রেজিস্ট্রি কার্যক্রম স্থগিত থাকায় জমির মালিকদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এ কার্যক্রম পুনরায় চালুর দাবিতে ২০ আগষ্ট বুধবার সকালে রাঙামাটি শহরের নরূপা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মানের সভাপতিত্বে আয়োজিত উক্ত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মুজিবর রহমান।
এছাড়া জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবু বকর, সহ-সভাপতি কাজী মো. জালোয়া, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন, ছাত্রনেতা আলমগীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বাজারফান্ড জমি মূলত সরকারিভাবে নির্ধারিত খাজনা ও সালামী প্রদানের মাধ্যমে বহু বছর আগে রেজিস্ট্রি হয়েছিল। কিন্তু চার বছর আগে থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় হঠাৎ করে এসব জমির বন্ধকি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে জমির মালিকরা ব্যাংক ঋণ, ব্যবসায়িক সহায়তা বা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মানববন্ধনে জানানো হয়, বাজারফান্ড জমির মালিকরা জমি বন্ধক রাখতে না পারায় বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়ছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে মূলধন সংকটে পড়ছেন, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ নিতে না পেরে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকে যাচ্ছেন। বক্তারা উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদারের জমি রেজিস্ট্রি করতে জটিলতা তৈরি হওয়া বিষয়টির গভীর সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, একটি মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে বাঙালিদের ভূমি ও নাগরিক অধিকার বারবার খর্ব করা হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেন। মানববন্ধনে বলা হয়, জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ধীরে ধীরে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারিভাবে বাজারফান্ড জমির মালিকরা নিয়মিত খাজনা প্রদান করছেন। অথচ শুধু রেজিস্ট্রি ও বন্ধকি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় অবিলম্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তারা।
মানববন্ধন থেকে নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি পূরণ না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন। তারা বলেন, ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে রাঙামাটি থেকে শুরু করে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাজারফান্ড জমি মূলত স্থানীয় জনগণের বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রয়োজনে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এগুলো সরকারি খাজনা ও সালামী প্রদানের মাধ্যমে দখল ও ব্যবহার হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো বন্ধক রাখা ও রেজিস্ট্রি কার্যক্রমের মাধ্যমে মালিকরা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, জমি সংক্রান্ত এ ধরনের অনিশ্চয়তা শুধু ব্যক্তিমালিকানাধীন অধিকারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং এলাকার সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, বাজারফান্ড জমির বন্ধকি ও রেজিস্ট্রি কার্যক্রম অবিলম্বে চালু না করলে এটি পার্বত্য অঞ্চলে নতুন এক সংকট সৃষ্টি করবে। সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি ঘোষণা করেন।