
মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » রাঙামাটি শহরে গরুর অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ, ডাম্পিং স্টেশন ও ময়লার ভাগাড় সরানো এবং ফুটপাত দখলমুক্তকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ পৌর প্রশাসক
রাঙামাটি শহরে গরুর অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ, ডাম্পিং স্টেশন ও ময়লার ভাগাড় সরানো এবং ফুটপাত দখলমুক্তকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ পৌর প্রশাসক
স্টাফ রিপোর্টার :: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা নং-৪৬. ০০. ০০০০. ০০০. ০৬৩. ২৭. ০০০২. ২৪-৯৯৮ তারিখ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ইংরেজি তারিখের প্রজ্ঞাপনের মা্ধ্যমে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ৪২ (ক) এর উপধারা (১) মোতাবেক পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত উপপরিচালক স্থানীয় সরকার পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণকে পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করা হয়।
জনস্বার্থে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো. মাহবুব আলম এ আদেশ স্বাক্ষর করেন।
এতে আরো বলা হয়, নিয়োগকৃত প্রশাসকগণ স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ৪২ (ক) এর উপধারা (৩) মোতাবেক পৌরসভার মেয়র-এর ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রশাসকগণ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্ব পালনকালীন তিনি বিধি মোতাবেক দায়িত্ব ভাতা প্রাপ্য হবেন। এছাড়া, অন্য কোন আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।
রাঙামাটি পৌরসভায় প্রথম রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নাসরিন সুলতানা বদলীর পর রাঙামাটি পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে বদলী হয়ে আসা রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক স্থানীয় সরকার মো. মোবারক হোসেন।
রাঙামাটি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে আছেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, রেকর্ডরুম শাখা, মিডিয়া সেল) (বদলীর আদেশাধীন) মো. ইয়াসিন খন্দকার।
পৌরসভার প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ২ জনই রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা তাই রাঙামাটি পৌরসভার প্রতিটি কাজে জেলা প্রশাসক এর ভূমিকা রয়েছে।
রাঙামাটি পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর উপপরিচালক স্থানীয় সরকার মো. মোবারক হোসেন বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করছেন সেবা না পাওয়া ভুক্তভোগি পৌর নাগরিকরা।
মো. মোবারক হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে রাঙামাটি পৌরসভার সময় মতো সেবা পাচ্ছেনা, তার মধ্য : জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র, নাগরিকত্ব সনদপত্র,ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, মৃত্যু সনদপত্র, ভূমিহীন সনদপত্র, ইমারত নির্মান আবেদন ইত্যাদি সেবা মাসের পর মাস ঘুরেও সঠিক সময়ে পৌর নাগরিকরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।
এসব এর মূল কারণ হচ্ছে : মো. মোবারক হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে সরকারি নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেন না।
তিনি রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে অফিসে যান বিকাল ৫টার পর। তখন পৌরসভার সকল কর্মকর্তা - কর্মচারীদের অফিস ছুটি হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ একই কাজ করেন রাঙামাটি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন খন্দকার।
এছাড়া ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারে সময়কালিন রাঙামাটি পৌরসভায় নাগরিক সেবা পেতে প্রতিটি স্বাক্ষরের জন্য নাগরিকদের গুনতে হচ্ছে ৩শত করে ঘুষ। বর্তমান সময়ে রাঙামাটি পৌরসভা থেকে ১টি জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র পেতে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র দেয়ার দায়িত্বে যারা কাজ করেন তাদের ওপর পৌরসভার অন্য শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার ফলে জন্ম নিবন্ধন বিতরণ শাখায় যারা কাজ করেন তাদের অফিসের বাইরে গিয়ে অন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এছাড়াও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলের কারণে পৌর নাগরিকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র বিতরণ শাখায় যারা কাজ করেন তারা প্রতি ১শতটি জন্ম নিবন্ধন পত্রের ভিতর ৯০টি ভুল করে দেয়।
আবার রাঙামাটি পৌরসভায় কাউন্সিলর না থাকায়, এখন কাউন্সিলারদের স্বাক্ষরস্থলে স্বাক্ষর করেন : রাঙামাটি এলজিইডি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী, রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।
এসকল নির্বাহী প্রকৌশলীগণ জুম মিটিংসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে এত বেশী ব্যস্ত থাকেন যে, ফাইল স্বাক্ষর করার মত সময় তাদের হাতে থাকেনা।
রাঙামাটির পৌর নাগরিকরা জরুরী প্রয়োজনে কোন সনদপত্র লাগলে তখন প্রয়োজন হয় নির্বাহী প্রকৌশলীদের স্বাক্ষর আর নির্ধারিত ওয়ার্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যদি রাঙামাটির বাইরে থাকেন তো সেবা গ্রহীতার তো সময় আর গাড়িভাড়া ২টাই জলে যায়। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকরা তাদের জরুরী প্রয়োজনে নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছে স্বাক্ষর করাতে নিজেরা সরাসরি ফাইল নিয়ে যান তখন দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী বলে বসেন, তিনি ঐ সেবা গ্রহীতা নাগরিক-কে চিনেন না, তখন বাধ্য হয়ে পৌর নাগরিকরা রাঙামাটি পৌরসভার কর্মচারীদের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছে ফাইল নিয়ে যান আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি স্বাক্ষরের জন্য সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে ঘুষ নেন পৌরসভার কর্মচারীরা।
সেবা নিতে আসা পৌর নাগরিকদের সাথে অশোভন আচরনের অভিযোগ বেশীর ভাগ রাঙামাটি পৌরসভায় কাউন্সিলর এর দায়িত্বে থাকা রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মি চাকমার বিরুদ্ধে।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে অতিমাত্রায় পৌর কর নির্ধারণ করা হয়েছে।
পৌর নাগরিকরা এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না ।
এবিষয়ে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকার একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,অতিমাত্রায় পৌর কর নির্ধারণ করায় তিনি নির্ধারিত ৩০ দিন সময়ের ভিতর প্রতিকার পাওয়ার আবেদন ফরম পূরণ করে ২ সাপ্তাহ পৌরসভা অফিসে ঘুরাঘুরি পর ডিসি অফিসে গিয়ে পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন এর সাথে স্বাক্ষাত করার পর তিনি সেবা গ্রহীতা ভুক্তভোগীকে রাঙামাটি পৌরসভা কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগী বলেন, অথচ প্রশাসক আমার ফরমে ১টি স্বাক্ষর করে দিলে আমার কাজটা হয়ে যেত কিন্তু তিনি তা করেননি।
এধরনের শত-শত মানুষের অভিযোগ রয়েছে ; পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন বিরুদ্ধে।
রাঙামাটি পৌরসভার সামনে ফুলের বাগানের নামে উন্মুক্ত স্থান ধ্বংসের প্রতিবাদে জেলা শহরে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।
কিন্তু পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন পৌর নাগরিকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক স্থানীয় সরকার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাঙামাটি পৌরসভার সামনে ফুলের বাগান করেন। শুধু তাই নয়, রাঙামাটি পৌরসভার সামনে ফুলের বাগানের জন্য সকল গাছ ও এসএস এর গ্রিল আনা হয়েছে দ্বীগুণ টাকা খরচ রাজধানী ঢাকা থেকে।
রাঙামাটি পৌরবাসীর প্রশ্ন রাঙামাটিতে কি এসএস দিয়ে গ্রিল তৈরী করার দোকান নাই ? না-কি রাঙামাটিতে ফুলের দোকানের নার্সারী নাই ? এবিষয়টি পৌরবাসীর কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে আগে যে সকল আর্থিক সহায়তা এবং রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিনে গণমধ্যমে রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দেয়া হতো পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন দায়িত্ব নেয়ার পর সকল কিছু বন্ধ করে দিয়েছেন।
রাঙামাটি পৌরসভা শহরে গরুর অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ রক্ষায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যকর ভূমিকা, পৌর প্রাঙ্গণে স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ, ফিসারি বাঁধের সৌন্দর্য রক্ষা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, শহরে প্রবেশমুখে ডাম্পিং স্টেশন ও ময়লার ভাগাড় সমস্যার সমাধান এসব ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন।
রাঙামাটি পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (ক্যাশিয়ার) মো. ফারুক আহমেদ যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তদন্ত চলছে তার, প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ সাজোশে ভেদ ভেদী পৌরসভার অক্টরী ইজারা ও কোরবানী ঈদে পশু হাটের ইজারা কৌশলে ১টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এসবের জন্য পৌর সভার নাগরিকরা পৌর প্রশাসক-কে দায়ী করছেন, পৌরসভার নিয়মিত ঠিকাদার বলেন, মোবারক হোসেন প্রশাসক এর দায়িত্ব পালনকালিন রাঙামাটি পৌরসভার ঠিকাদারী টেন্ডার সমুহ ১টি দলের নির্দিষ্ট ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ পায় না, এর মূল রহস্য কি ?
এছাড়া নিময় নীতির তোয়াক্কা না করে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের উন্নয়ন কাজ বছরের শেষে জুন-জুলাই মাসে শুরু করা হয়।
মোবারক হোসেন এর সময়কালিন রাঙামাটি শহরের জনগণের চলাচলের ফুটপাত বেদখল হয়েছে কয়েক গুণ বেশী।
এবিষয়ে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি বলেন, রাঙামাটি শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তারা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়, তখন পুলিশ পৌর প্রশাসনকে অবশ্যই সহযোগীতা করবেন। এটার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে পৌর প্রশাসনকে বলেন এসপি রাঙামাটি।
গত ১৪ আগস্ট-২০২৫ পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত পৌরসভা কেন্দ্রিক পৌরবাসীর ভাবনা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা বিষয়ক কর্মশালা নিয়ে পৌর প্রশাসক মোবারক হোসেন নতুন বিতর্কের সুচনা করেছেন । তিনি ১টি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন।
বিতর্কিত পৌর প্রশাসক-কে সরিয়ে দল নিরপেক্ষ ব্যাক্তিকে পৌর প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়ার রাঙামাটি পৌরবাসীর দাবি অন্তর্বর্তীকালিন সরকারে নিকট।
বিষয়টি নিয়ে পৌর প্রশাসক মোবারক হোসেনের মতামত জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় রাঙামাটি পৌর প্রশাসক এর মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।