সোমবার ● ৭ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » পানি শূণ্য হয়ে পড়ছে হালদা নদী : হুমকির মুখে জীববৈচিত্র ও মৎস্য প্রজনন
পানি শূণ্য হয়ে পড়ছে হালদা নদী : হুমকির মুখে জীববৈচিত্র ও মৎস্য প্রজনন
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম,ফটিকছড়ি :: এশিয়ার অন্যতম মিঠা পনির মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি অংশ পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে।
কোথাও কোথাও পানির ধারা আছে;তবে বেশিরভাগ এলাকায় নদীর তলদেশ এখন বালুচর। কোথাও আবার ফাটল দেখা দিয়েছে। এমতববস্থায় মৎস্য প্রজনন ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া দু পাড়ের বাসিন্দারা চাষাবাদ ও পানির সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সমিতিরহাট থেকে নারায়ণহাট পর্যন্ত হালদা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগেছে। বালুচরের নিচু এলাকা দিয়ে সামান্য পরিমাণে পানি নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে। সেখান থেকে বালতি ভরে পানি নিয়ে চাষিরা সবজি চাষাবাদের জন্য সেচ দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুগের পর যুগ ধরে নদীপাড়ের চাষিরা নদীর বিভিন্ন চরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সবজির পাশাপাশি বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন। হালদার পানির ওপর নির্ভর করে সমিতিরহাট, রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর,হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার কৃষকের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকা। অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের প্রতিটা দিন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি সংকটের কারণ হচ্ছে রাবার ড্যাম, নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন, চা বাগানে পানি নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
পাইন্দং গ্রামের বাসিন্দা মো. হাকিম বলেন, এক দশক আগেও নদীর গভীরতা ছিল। তখন নদীতে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ ছিল। নদীর পানি দিয়ে সবজি ও ধান চাষাবাদ করতেন স্থানীয় চাষিরা। বিশেষ করে নদীর চরে সবজি ও ধান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাড়ের অনেক চাষি।
সুয়াবিল গ্রামের তোফায়েল বলেন, হালদার চরে জমি আছে আমার। সেখানে শুধু সবজির চাষ হতো। নদীর পানিই ছিল চরের উর্বরা শক্তির মূল উৎস। তখন পানির অভাব ছিল না। ফলে চরে সবজি চাষ করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতাম। কিন্তু বর্তমানে পানি না থাকায় চরের জমিতে সবজির চাষ করা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ১০০ বছরে হালদা নদীর অন্তত ১১টি বড় আকারের বাঁক কেটে সোজা করা হয়েছে। নদীর বাঁক কার্প জাতীয় মাছের প্রধান বসতি। বাঁক সোজা করে ফেলায় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র কমে গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকদের ক্ষতি না করে হালদায় রাবার ড্যামের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলার কৃ ষকদের হালদার পানি ব্যবহার থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে রাবার ড্যামগুলো সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে উৎস থেকে নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। হালদা খালের উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ি ঝরনা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে নামকরণ হয় হালদা। এটি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িশ্চরে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে। হালদার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরুং, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, বোয়ালিয়া, চানখালী, সত্তা, কাগতিয়া, সোনাইখাল, পারাখালী, খাটাখালীসহ বেশ কিছু খাল ও ছড়া।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণায় হালদা নদীর জন্য মানবসৃষ্ট ক্ষতিকর অন্তত ১০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলোর জন্য নদীর পানি ব্যবহার, নদী থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উত্তোলন, মা মাছ নিধন, নদী থেকে নির্বিচারে বালু তোলায় এর মাটির গঠন নষ্ট হয়েছে। তীরে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে নদীর মাটি ও পানি। নদীর ১১টি স্থানের বাঁক সমান করে ফেলায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন কমে গেছে। মানিকছড়িতে নদীর তীরে তামাক চাষ ও যন্ত্রচালিত নৌযান থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে দূষিত হচ্ছে হালদা নদী। হালদা হলো বিরল বৈশিষ্ট্যের নদী। বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটা সমৃদ্ধ হালদা নদী স্বাদু পানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। নদীটির উৎপত্তি আর সমাপ্তি দুটিই দেশের ভেতরে। রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয় এ নদী থেকে। হালদা নদী বাংলাদেশের সাদা সোনার খনি হিসেবেও পরিচিত। হালদা নদী থেকে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হতো। এ নদী শুধু মৎস্য সম্পদের জন্য নয়; যোগাযোগ, কৃষি ও পানি সম্পদেরও একটি বড় উৎস। ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু, পোনা থেকে মাছ হিসেবে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত দেশের মৎস্য খাতে হালদা নদী চার ধাপে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট, রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার কৃষক চরের প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল উৎপাদনে সেচের পানির জন্য হালদা নদীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কিন্তু গত এক দশকে হালদা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এখানে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি অনেকটাই অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হালদা নদীর পানির ওপর শুধু সবজি নয়, কয়েকটি বিলের বোরো ধানের চাষাবাদও নির্ভরশীল। কিন্তু নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর কয়েকটি শাখা খালও মরে যাচ্ছে। নদী ও শাখা খাল খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হবে।




আগামী কাল বিপ্লবী যুব সংহতির রাঙামাটি জেলা কাউন্সিল
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা না করে আরপিও চূড়ান্ত করায় ক্ষোভ প্রকাশ
বেণুবন উওমানন্দ ধর্মবন বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব ও সংবর্ধনা
পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণগঠন
টেকসই হবেনা - এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন
তীর্থ ভ্রমনে বিজয়ানন্দ থেরো
ডলুছড়া মহামুনি বৌদ্ধ বিহারে ১৮তম কঠিন চীবর দান ও স্থবির বরণোৎসব সম্পন্ন
ভেংগে পড়া নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর জনআস্থা ফিরিয়ে আনাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ
থেরবাদী বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম জাতীয় ধর্মীয় উৎসব শ্লোগান নিয়ে শীলছড়ি অভায়রণ্য ধন্য কেন্দ্রে কঠিন চীবর দান উদযাপন
ফেব্রুয়ারীর সুষ্ঠু নির্বাচনই কেবল এই সরকারকে মুক্তি দিতে পারে 