
সোমবার ● ২১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ : অমর বীরের শাহাদাত বার্ষিকী
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ : অমর বীরের শাহাদাত বার্ষিকী
মো. মোস্তফা রাজু :: আজ ২০ এপ্রিল, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাত বার্ষিকী। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে কাপ্তাই হ্রদের মাঝে একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই অকুতোভয় যোদ্ধা। এই দ্বীপটি আজ বাঙালির গৌরবের প্রতীক, যেখানে তার সমাধি সৌধ স্বাধীনতার জন্য তার আত্মত্যাগের মহিমা বহন করে।মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ মে ফরিদপুর জেলার (বর্তমানে মাদারীপুর) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি আব্দুল আজিজ ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। অভাবের মধ্যে বেড়ে ওঠা এই তরুণ ১৯৬৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগ দেন। তার সামরিক প্রশিক্ষণ ও দেশপ্রেম তাকে মুক্তিযুদ্ধের একজন অগ্রগণ্য যোদ্ধায় পরিণত করে।১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগ দেন। ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর একজন সৈনিক হিসেবে তিনি ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে রাঙামাটি-মহালছড়ি পানিপথে শত্রুর অগ্রগতি ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০ এপ্রিল বুড়িঘাটে পাকিস্তানি কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুটি কোম্পানি, স্পিড বোট ও লঞ্চ নিয়ে আক্রমণ চালায়। মর্টার ও ভারী অস্ত্রের মুখে মুন্সি আব্দুর রউফ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর একাধিক নৌযান ধ্বংস করে। কিন্তু এক পর্যায়ে মর্টার গোলার আঘাতে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা দয়াল কৃষ্ণ চাকমা তার দেহ উদ্ধার করে কাপ্তাই হ্রদের ওই দ্বীপে সমাহিত করেন।১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এই দ্বীপে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে, যা আজ তার বীরত্বের নীরব সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহসিকতার জন্য তাকে মরণোত্তর ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান।তার সমাধি সৌধে দাঁড়ালে আজও মনে পড়ে তার অকৃত্রিম দেশপ্রেম। কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশির মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপটি শুধু একটি ভৌগোলিক স্থান নয়, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর এই দিনে মানুষ এখানে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তার বীরত্বের গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেন।মুন্সি আব্দুর রউফের জীবন ও শাহাদাত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা কোনো সহজলভ্য অর্জন নয়। এটি অসংখ্য বীরের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত। তার এই আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা জোগায় দেশের জন্য নিবেদিত থাকতে এবং সততা ও সাহসের সঙ্গে জীবন পরিচালনা করতে। আসুন, তার শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা শপথ নিই, তার আদর্শ ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।