
মঙ্গলবার ● ২৭ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » কুষ্টিয়ায় দুদকের গণশুনানিতে সরকারি কর্মকর্তাদের তুলোধোনা
কুষ্টিয়ায় দুদকের গণশুনানিতে সরকারি কর্মকর্তাদের তুলোধোনা
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’ এই প্রত্যয়ে কুষ্টিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের উদ্যোগে ১৭৮তম গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার সকালে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এ শুনানির আয়োজন করা হয়। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন। বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মঈনুল ইসলাম রওশনী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দুদকের ঝিনাইদহ জেলার উপ-পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ। শুনানিতে সেবাগ্রহীতারা জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জন স্বার্থসহ নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা এসব ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তবে সিভিল সার্জন অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের তুলোধুনা করেন দুদক কর্মকর্তারা। শুনানিতে একজন সেবা গ্রহীতা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে বহুল টেস্ট রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগ আনে। এছাড়া তিনি জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অফিস এখন পর্যন্ত কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চান। জবাবে সিভিল সার্জন বলেন যে সব ক্লিনিকের কাগজপত্র ঠিক নেই এবং যেসব ক্লিনিক ওটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে ব্যবসা চালাচ্ছে তাদের তিন মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে এই সময়ের মধ্যে তারা সবকিছু ঠিক না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জবাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে দ্রুত কর্মকর্তারা বলেন একজন মানুষকে কেন তিন মাস অবৈধ ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন। তারা বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সীলগালা করে দিন। আরেকজন সেবা গ্রহীতা পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার একাধিক শিল্প কারখানায় সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এসব কারখানার বর্জ্য এলাকার জলাশয়ের পানিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এতে মিঠা পানির মাছ নিধন হচ্ছে। কুষ্টিয়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ ওই দফতরের কর্মকর্তারা এসময় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেবা গ্রহীতা এসব কারখানার বর্জ্য কিভাবে পানি ও পরিবেশ দূষণ করছে তার ফটোগ্রাফ প্রদর্শন করেন। তা দেখে দুদকের কর্মকর্তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। তারা বলেন, আপনারা কল কারখানার মালিকদের কাছ থেকে টুপাইস কামানো বন্ধ করেন। বেতনটা হালাল করে নেন। এছাড়া জেলার দুর্নীতি কমাতে দুদককে সহযোগিতা করার জন্য সংবাদকর্মীসহ স্থানীয় সচেতন মহলের প্রতি আহ্বান জানান তারা। অনুষ্ঠানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, কুষ্টিয়া পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, পাসপোর্ট অফিস, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, বিএডিসি অফিস, বিআরটিএ অফিস, এলজিইডি, ভোক্তা অধিকার, নির্বাচন অফিস, সমাজসেবা কার্যালয়, পল্লী বিদ্যুৎ, গণপূর্ত বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, পুলিশ সুপার কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা একাউন্টস অফিস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, ভূমি অফিস, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কুষ্টিয়া জেলার প্রায় সকল সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ অভিযোগের বিষয়ে তাদের জবাব দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন- যা সুনীতি নয়, তাই দুর্নীতি। বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ আগামী বছর কুষ্টিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করার আহবান জানান।
এ সময় উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল, উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মাইদুল ইসলাম, উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ সায়েদুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদেরী শাকিল, সহ-সভাপতি শাহ নওয়াজ আনসারী মনজু, দুদক জেলা কমিটির সদস্যবৃন্দ সরকার রফিকুল ইসলাম শাহিন, মোঃ আবু আকরাম, কাজী এমদাদুল বাশার রিপন, মোঃ ওবাইদুর রহমান, শেখ জায়েদুল হক মতিন, নীলিমা আক্তার, পারভীন আক্তার মিলি, মোঃ শহিদুল ইসলাম সুমন প্রমুখ।