
শনিবার ● ২৪ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » মাদ্রাসা ঝড়ে লন্ডবন্ড : বন্ধ রয়েছে পাঠদান
মাদ্রাসা ঝড়ে লন্ডবন্ড : বন্ধ রয়েছে পাঠদান
উবায়দুল্লাহ রুমি :: ময়মনসিংহের নান্দাইলে দুই যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ধর্মীয় নারী শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব আঃ কদ্দুছ বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটি আজো কোন ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। দুই যুগ আগে ডেউটিন দিয়ে নির্মিত টিনের ঘরগুলো গত ১৯ মে আবারো ঝড়ে লন্ডবন্ড হয়ে গেছে। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নান্দাইলের সীমান্তবর্তী মুসুল্লি ইউনিয়নের মেছারকন্দা নয়াপাড়া এলাকায় নারী শিক্ষার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০০২ সনে স্থানীয় সমাজ হিতৈষী, শিক্ষানুরাগী ডঃ আব্দুর রহমান আনোয়ারীসহ তার পরিবারের সদস্যরা এক একর জমি দান করে আলহাজ্ব আঃ কদ্দুছ বালিকা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতাদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ডঃ আব্দুর রহমান আনোয়ারীসহ তার পরিবারের সদস্যদের দান করা ঐ জমিতে তৎ সময়ে মাদ্রাসায় যোগদান করা শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের নিজের অর্থায়নে মাটি কেটে ভরাট করণসহ মাদ্রাসার দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসরুম, অফিস রুম, নির্মাণ, আসবাবপত্র নির্মাণ করে নিয়মিত পাঠদান শুরু করেন। দীর্ঘ দুই যুগেও মাদ্রাসার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মোঃ আবুল হাশেম ভুইয়াসহ অনেকেই। অবশ্য এই দীর্ঘ সময়ে একজন শিক্ষক কিংবা কর্মচারীর এমপিও না হওয়ায় অনেকেই অন্যত্র চলে গেছেন। সুপার সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক দুই যুগ ধরে আজো চেয়ে আছেন সরকারের দিকে। যাতে জীবনের শেষবেলাতেও তাদের এমপিও হয়। সেই আশায় বিনা বেতনে পেটে পাথর বেধে খেয়ে না খেয়ে এলাকার শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুপার বলেন, দুই যুগ আগে ২০০২ সনে নারী শিক্ষার ধর্মীয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছি। ২০০৫ সনে পাঠদানের অনুমতি এবং ২০০৯ সনে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে ফলাফল অর্জন করে আসছে। শুরুতে সকল শিক্ষকদের আন্তরিকতায় সুষ্ঠভাবে পাঠদানের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো। এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও না হওয়ায় অনেক শিক্ষক চাকুরী নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। শিক্ষক ঘাটতির কারণে মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত লেখাপড়া করতে অন্যত্র চলে যায়। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে প্রতিষ্ঠান চলতে থাকাবস্থায় আবারো শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বর্তমানে ১০ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন। এছাড়া ১৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। চলতি ২০২৫ সনে ১৮ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। গত দুই বছরে দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল বেশ সন্তোষজনক অবস্থানে ছিল। আশা করা যায় এবারো সন্তোষজনক ফলাফল হবে। বর্তমানে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় সবগুলো ক্লাসরুম লন্ডবন্ড হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মাদ্রাসাটি আপাতত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ১৯ মে ঝড়ের একটু আগে মাদ্রাসাটি ছুটি দেয়া হয়েছে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে ঝড় হলে বহু হতাহতের শঙ্কা ছিল। আল্লাহর রহমতে কারো ক্ষতি হয়নি।
লন্ডবন্ড মাদ্রাসাটির ক্লাসরুম পাঠদান উপযোগী করে তুলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জরুরি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা হওয়ায় স্থানীয়রা এখন আর সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। এর আগেও কয়েকবার এই মাদ্রাসাটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় আমরা নিজেরা মেরামত করেছি। বিনা বেতনে চাকুরী করায় বর্তমানে শিক্ষকগণও নিজের টাকায় প্রতিষ্ঠানটি মেরামত করে পাঠদান চালু রাখতে অনেকটা অনিহা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, একে তো বছরের পর বছর ধরে বেতন নেই। আবার মাঝে মধ্যেই মেরামতের জন্য টাকা খরচ। এভাবে অনেক শিক্ষক চাকুরী থাকলেও বেতন না হওয়ায় পারিবারিকভাবে ধৈন্যদশায় দিনাতিপাত করছেন। সুপার আরো বলেন, আকাশের (আবহাওয়া) অবস্থা ভালো নেই। খোলা মাঠে কিংবা গাছ তলায় পাঠদান চালানো সম্ভব নয় বিধায় মাদ্রাসা বন্ধ (ছুটি) দেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি মেরামত করে পাঠদান উপযোগী করার চেষ্টা করছি।