
শনিবার ● ১৭ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » পার্বত্য মন্ত্রণালয় নাকি সাম্প্রদায়িক মন্ত্রণালয় ?
পার্বত্য মন্ত্রণালয় নাকি সাম্প্রদায়িক মন্ত্রণালয় ?
সৈয়দ ইবনে রহমত :: গত ১৩ মে ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচি থেকে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের অনুকূলে খাদ্যশস্য বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এটি নতুন কোনো তালিকা নয়। গত ২৭ মার্চ ২০২৫ যে তালিকা প্রকাশের পর স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, জাতিগত বৈষম্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, সেটি বাতিল করে সংশোধিত এই তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।
১৩ মে প্রকাশিত সংশোধিত তালিকায় ৫৮ জন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে মোট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে ১৫২২ মে. টন খাদ্যসশ্য। এর মধ্যে বাঙালি ৫ জন (৮.৬২%) বরাদ্দ পেয়েছেন ৮০ মে. টন (৫.২৬%), চাকমা পেয়েছেন ৫২ জন (৮৯.৬৬%) বরাদ্দ পেয়েছেন ১৪৩২ মে. টন (৯৪.০৯%) এবং মারমা পেয়েছেন ১ জন (১.৭২%) বরাদ্দ পেয়েছে ১০ মে. টন (০.৬৬%)।
এর আগে ২৭ মার্চ যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানেও মোট ৫৮ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৯১৩ মে. টন খাদ্যসশ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বাঙালি ৫ জন (৮.৬২%) বরাদ্দ পেয়েছেন ৮০ মে. টন (৪.১৮%), চাকমা পেয়েছেন ৫২ জন (৮৯.৬৬%) বরাদ্দ পেয়েছেন ১৮২৩ মে. টন (৯৫.৩০%) এবং মারমা ১ জন (১.৭২%) বরাদ্দ পেয়েছেন ১০ মে. টন (০.৫২%)।
অথচ, ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে খাগড়াছড়ির মোট জনসংখ্যা ৭১৪১১৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৩৬৪৭৪১ (৫১.০৮%) জন এবং অবাঙালি ৩৪৯৩৭৮ (৪৮.৯২%) জন। অবাঙালিদের মধ্যে চাকমা ১৭৫,১৬৫ (২৪.৫৩%) জন, ত্রিপুরা ৯৮,৫০০ (১৩.৮০%) জন, মারমা ৭৪,২১০ (১০.৩৯%) জন এবং অবশিষ্টরা অন্যান্য জনগোষ্ঠির।
অর্থাৎ জনসংখ্যানুপাতে খাদ্যসশ্য বণ্টিত হলে বাঙালিদের পাওয়ার কথা ৫১.০৮% পেয়েছে ৮.৬২%, চাকমাদের পাওয়ার কথা ২৪.৫৩% পেয়েছে ৮৯.৬৬%, মারাদের পাওয়ার কথা ১০.৩৯% পেয়েছে ১.৭২%, ত্রিপুরাদের পাওয়ার কথা ১৩.৮০% পেয়েছে ০.০০%।
শুধু কি খাদ্যশস্য বণ্টনেই পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে এই জাগিত বৈষম্য করা হচ্ছে? না, এই বৈষম্য করা হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, পার্বত্য মন্ত্রণালয় গত ২৫ মার্চ ২০২৫ খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মাধ্যমে বণ্টনের জন্য আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১৯৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেই তালিকাটিকেও।
পার্বত্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ১৯৫ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় বাঙালি ৪১ (২১.০৩%), চাকমা ১০০ (৫১.২৮%), মারমা ৪২ (২১.৫৪%), ত্রিপুরা ১০ (৫.১৩%) এবং সাঁওতাল ২ (১.০৩%) অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। জেলায় মোট বরাদ্দকৃত ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বাঙালি ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকা (যা মোট বরাদ্দের ১৩.৭৩%), চাকমা ২ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা (যা মোট বরাদ্দের ৭৩.০৯%), মারমা ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা (যা মোট বরাদ্দের ৬.৯৪%), ত্রিপুরা ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা (যা মোট বরাদ্দের ৫.৬০%) এবং সাঁওতাল ২ লাখ টাকা (যা মোট বরাদ্দের ০৬৪%) পেয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে সৃষ্ট শক্তি যখন দেশের সরকার, তখন সেই সরকারের একটি মন্ত্রণালয় কীভাবে এমন জাতিগত বৈষম্য করতে পারে? এই মন্ত্রণালয়টি সত্যিই পার্বত্যবাসীর কল্যাণের জন্য নাকি কোনো বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য গঠন করা হয়েছে? যদি কোনো বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য গঠিত হয়ে থাকে তাহলে এর নাম পরিবর্তন করে সেই বিশেষ জাতি বা সম্প্রদায়ের নামেই রাখা যুক্তিসঙ্গত নয় কি?