
মঙ্গলবার ● ৬ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ৪৬ কোটি টাকার হালদা প্রকল্পে হ্যাচারীর বেহাল অবস্থা
৪৬ কোটি টাকার হালদা প্রকল্পে হ্যাচারীর বেহাল অবস্থা
আমির হামজা. রাউজান প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে জীববৈচিত্র রক্ষায় মৎস্য বিভাগের নেয়া ৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান থাকলেও নদী পাড়ে মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারীর মধ্যে দুইটি ছাড়া বাকি হ্যাচারী গুলোর অবস্থা পরিত্যক্ত হয়ে আছে। অথচ এসব হ্যাচারীর সংষ্কার ও সাথে পুকুর খননের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, হালদা পাড়ে চারটি হ্যাচারীর ডিম ফুটানোর সাকুলার ট্রাঙ্ক ও চিসটেন সমূহের ভঙ্গুর অবস্থায়। অভিযোগ রয়েছে মৎস্য বিভাগ থেকে তদারকির অভাব ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের অবহেলার কারণে বিলম্বে কাজ শুরু করে এখন দুটি তালিজোড়া দিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। দেখা যাই নদীর পাড়ে অপর দুটি হ্যাচারী বহু বছর ধরে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। খবর নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে নেয়া ৪৬ কোটি ওই প্রকল্পের কর্মসূচিতে ছিল নদীর পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র রক্ষায় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৌসুমী ডিম সংগ্রহকারীদের জন্য আগে নির্মিত পুরোনা হ্যাচারী সমূহকে সংষ্কার করে আধুনিকায়ন করার।
হালদার পাড়ের মৎস্যজীবিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে নদীর মাছ চোরদের জালপাতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পরিচালিত অভিযানে এবার অনেকটা সুফল মিলেছে। হাটহাজারী ও রাউজানের উপজেলা প্রশাসন নৌ-পুলিশকে সাথে নিয়ে রাত দিনের অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার মিটার জাল পুড়েছে। প্রশাসনের এই অভিযানে জালপাতা কমে যাওয়ায় এখন নদীর মা মাছের বিচরণ বেড়েছে। সকলেই মনে করেন আগামী আমবশ্যার তীথিতে ঝড়বৃষ্টির অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মাছ ডিম দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন সম্ভবনার মাঝে হালদা নদীর উভয় পাড়ে ঘুরে দেখা গেছে মৌসুমী ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা,জাল,নোঙ্গর নিয়ে প্রস্তুতিতে আছে। তবে ডিমসংগ্রহকারী মৎস্যজীবিদের অভিযোগ রয়েছে সরকারি হ্যাচারী গুলোর সংষ্কার কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা রয়েছে। হ্যাচারী গুলো সংষ্কারের কাজ চলছে অত্যান্ত ধীরগতিতে। তাছাড়া বিলম্বে কাজে হাত দেয়ায় ডিম সংগ্রহকারী ভরা মৌসুমে এবার কোনো সুফল পাবে না। ডিম সংগ্রহকারীরা সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কূয়ায় ডিম রেখে আগের মত পোনা উৎপাদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র সমূহ থেকে জানা যায় হ্যাচারী গুলোতে ডিম সংগ্রহকারীদের সেবা দেয়ার মত জনবল নেই। একজন কেয়ারটেকার এর সাথে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন করে কম্পিউটার অপেরটার। গত বৃহস্পতিবার হালদার উভয় পাড়ে থাকা মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারী পরিদর্শন করে দেখা যায় রাউজানের তিনটি হ্যাচারীর মধ্যে দুটি পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া হ্যাচারী বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। দুটি হ্যাচারী সংষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাউজানের এক মাত্র মোবারকখীল হ্যচারীতে ডিম ফুটানোর উপযোগি করতে সংষ্কার কাজ চলছে। পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে হাটহাজারী অংশে থাকা তিনটি হ্যাচারীর মধ্যে গড়দুয়ারার মাছুয়াঘোনা হ্যাচারীটি পূর্ণমাত্রায় সংষ্কার কাজ চলছে। এখানে দৈনিক মুজুরিতে কাজে নিয়োজিত সাধারণ শ্রমিকদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন গত বছর এই হ্যাচারীতে কম্পিউটার অপেরটার হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলাম। সাইফুলের আশা এই হ্যাচারীতে থাকা ৪০টির মত সিষ্টেনের সবকটিতে ডিম ফুটানো যাবে। মাদার্শা শাহমাদারী হ্যাচারীতে দেখা যায় আগের তৈরী পাকা সিষ্টেনের (পাকা ট্রাঙ্ক) গুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ ট্রাঙ্ক ফুটো হয়ে পড়ে আছে। দুজন মিস্ত্রি ট্রাঙ্কের ফুটো বন্ধে কাজ করছে। কাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজ মিস্ত্রি সামশুল আলম বলেছেন এই হ্যাচারীর ডিম ফোটানো ট্রাঙ্ক গুলোতে লাগানো পানির সঞ্চালন লাইনের বেশির ভাগ নাটবোল্ট চুরি হয়ে গেছে। এই হ্যাচারীর গভীর নলকুপের পাম্পটি নষ্ট হয়ে থাকায় একটি স্যালো পাম্প নদীর সাথে সংযোগ দিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন এই হ্যাচারীর ৪০টির মত ট্রাঙ্ক থাকলেও সংষ্কারের পর মাত্র কয়েকটিতে ডিম রেখে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। দেখা গেছে, মদুনাঘাট বড়ুয়া পাড়ার হ্যাচারীটি এক রকম বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। এই হ্যাচারীর প্রায় প্রতিটি ডিম ফুটানো পাকা ও ফাইভার চিসটেন (ট্রাঙ্ক) ময়লা আবর্জনায় ভর্তি হয়ে আছে। এই হ্যাচারীটি এখন একরকম ব্যবহার হচ্ছে ছাগলের খামার হিসাবে। হ্যাচারীটির প্রায় পাইপ লাইনের মরিচায় জং ধরে নষ্ট হয়ে আছে। আগের একটি পরিত্যক্ত স্পীড বোর্ড মাটির নিচে চলে যেতে চলেছে। জানা যায় এই হ্যাচারীর দেখবাল করছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত কেয়াটেকার ইয়াকুব আলী। তার সাথে কথা বলে জানা যায় এই হ্যাচারীতে হ্যাচারী সহকারি হিসাবে আছে আবদুর রহমান নামের একজন। এখানে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাইফুল ইসলাম নামের একজন কম্পিউটার অপারেটর। হ্যাচারীর নাজুক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে কেয়াটেকার ইয়াকুব আলীর দাবি হ্যাচারীতে সবকিছু ঠিকটাক আছে। তবে এই হ্যাচারীতে সুবিধাভোগিদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেছেন ইতিপূর্বে এই হ্যাচারী ডিম নিয়ে এসে ত্রুটিপূর্ণতার কারণে ডিম নষ্ট করতে হয়েছে। এবারও রাখা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায়। এবিষয়ে জানতে চাইলে হালদা প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন কিছুজটিলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও হ্যাচারী গুলো সংষ্কার কাজ দ্রুত সময়ে আমরা শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।